Description
পড়াশোনা কাজকর্মের চক্করে দেড় দশকেরও বেশি সময় ঘরের বাইরের জগতে কাটানোর পর যখন সবে ফিরে এসেছি নিজের কুঁড়েমি-কোণটিতে, হঠাৎই ইচ্ছে করল সেই উস্কানিতে সাড়া দিতে। ল্যাপটপ বাগিয়ে বসলুম তরিবৎ করে। লেখার মধ্যে আস্তে আস্তে প্রবেশ করতে করতে অবাক হয়ে দেখলাম, হৃদয় ও মস্তিষ্কে এতদিন ধরে পাঠযাপনের যে কিসসাগুলি ঘর করেছে, তারা নিজে নিজেই সাকিন খুঁজে নিচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত অক্ষরের সারিতে। লিখতে লিখতে অনুভব করতে থাকলাম অদ্ভুত অসামান্য এই দুনিয়া। এখানে জীবনের যাত্রাপথের সঙ্গী হয়ে ওঠে বই, আশেপাশের বিচিত্রবর্ণিল চরিত্রদের যাপন আর পড়ে ওঠা গ্রন্থের চলন এক হয়ে যায় নিমেষেই। উদ্বাস্তু পরিবারের অভিভাবক হয়ে থাকে মহাভারত— প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। শিকড়সন্ধানী এক বৃদ্ধের আকুতিতে জড়িয়ে থাকে বিভূতিভূষণের ‘ইছামতী’ উপন্যাসের মেদুর কিছু পঙ্ক্তি। পার্টিকর্মী দুধওয়ালা বৃথা বয়ে নিয়ে যায় দাস ক্যাপিটালের ভীমকায় খণ্ড। জীবন প্রতিমুহূর্তে জন্ম দেয় নতুন নতুন কিসসার। কিশোর প্রেমিক পড়শি তরুণীর সুললিত আবৃত্তি শোনে মুগ্ধ বিস্ময়ে, জয় গোঁসাই হয়ে ওঠেন নিরুচ্চার প্রেমের মেঘদূত। কখনও কৈশোর ঝুঁকে পড়ে নিষিদ্ধ আহ্বানের দিকে, হলদে মলাটের পাপবিদ্ধ চটি বই তাকে ডাকে গোপন হাতছানিতে।
জীবন বিপুল বড়ো, পৃথিবীর মতোই বুঝি বা। সেই বিচিত্র জীবনের উচ্ছল তরঙ্গভঙ্গে দুলে পাঠক পৌঁছয় দিনদুনিয়ার দুয়োরে। অবাক হয়ে সে দেখে ঘরের বাইরেও রয়েছে গ্রন্থজীবনের এক ঘর, পথের শেষেও বিছানো গ্রন্থযাপনের এক পথ। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পৌঁছতে পৌঁছতে সে দেখে চামড়ার রং, মুখের ভাষা, বাসের জমির বিভিন্নতা ছাপিয়ে মানুষ এক হয়ে যায় বইয়ের হাত ধরে। সুইস আল্পসের কোলের একটি গ্রামে এক পোলিশ তরুণী ডাকঘর নাটকের সূত্রে মধ্যভারতের দামাল এক তরুণের পাশাপাশি দাঁড়ায় মহাকালের চালচিত্রে। ছত্তিশগড়ের অরণ্যচারী এক উন্মাদ বৃদ্ধ ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্রতীরে খরিদ করা বইয়ের খোলা পাতার উপর দীর্ঘ ছায়া ফেলে যায়। চিনসাগরের তীরে অখ্যাত জাপানি শহরের দোকানি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় নিজের ঈশ্বরকে খুঁজে পায়।
এই বই সেইসব কিসসার উদ্যাপন। সেইসব কাহিনিযাপনের অবসরে পাঠক ক্রমে জীবনপিপাসু হয়ে ওঠে, কবিতা থেকে খুঁজে নিতে চায় তাদের সৃষ্টিমুহূর্তের আখ্যানগুলি, কখনও বা গ্রন্থালোচনায় মিশিয়ে দেয় আটপৌরে জীবনের মধু, আবার কখনও জীবনের দিকে তাকায় বাঁকা চোখে।
ইদানীং টুকটাক ফিকশন লিখলেও, গ্রন্থযাপন-গ্রন্থজীবনের এই বইটি যে আমার প্রথম প্রকাশিত বই হবে এ যেন নিয়তির এক চরম ন্যায়বিধান। বিশ্বপ্রকৃতির এই পোয়েটিক জাস্টিসকে প্রণতি জানাই আর পাঠককে জানাই স্বাগত। ‘দুই মলাটের দুনিয়া’ আপনাদের সামনে উন্মুক্ত।
Reviews
There are no reviews yet.