Description
বিশু এক আদ্যোপান্ত ভবঘুরে। প্রেম অপ্রেম চুলোয় দিয়ে সে বসে থাকে কখন একখানি চোখের জলে ভাসা বিদেহী তার কাছে অশ্রুকাহন গাইতে আসবে। বিয়ের দিনে (যদিও কবে বিয়ে হয়েছিল, কত লক্ষ বছর আগে কেউ জানে না) বউয়ের জন্য নিয়ে আসে দু মুঠো শাকভাত বা গাজনের নাচ নেচে পাওয়া এক শালপাতা সিদ্ধ চালের খিচুড়ি। সভ্য লোক তাকে বলবে ‘ওয়ার্থলেস ‘।তবুও বিশুর গল্প তোমরা শুনো। এ চণ্ডালের ক্ষয়াখর্বুটে শীর্ণ পাঁজরার নীচে কোনো বস্তু ধুকপুক করে কি না তোমরা জেনো।
এবার থেকে বিশু চাঁড়াল তোমাদের উঠোনের ভিক্ষার্থী হলো। হয় তো কাল সকালেই সে তোমাদের দুয়ারে দাঁড়িয়ে গেয়ে উঠবে …
“এতেক কহিয়া যোগী
দাঁড়াইল ভিখ মাগি,
চক্ষে নিয়া অসীম ক্ষুধা…”
তখন তোমরা তাকে যেন ফিরিয়ে দিও না, বড় অভাগা সে কপর্দকহীন। তাকে কিছু না দাও, হাসিমুখে চৌকাঠ পার হয়ে এসে একবার বলে যেও …
“মাতা কহে, দাঁড়া ওরে
অন্ন বাড়ন্ত ঘরে,
দিই তোরে অমৃতের সুধা।
তবে একা বিশু নয়। এক অদ্ভুত অলীক জগতের বিভিন্ন তল নিয়ে আসা হয়েছে এ গ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। আমি ভয় বা মানুষকে আলাদা করে দেখতে পারি না। শুধুমাত্র শিশুমনই নয়, পরিণত মানসলোকও অচেনা, অজানা, অদেখা ভয়ে কেঁপে ওঠে। সে ভয় কখনও দৃশ্যমান, কখনও আবার নিজ মনেরই বিচিত্র কায়াধারণ। “বিশু চাঁড়ালের থান ” ভয় ‘বড়দের’ ভয়। এমন সব ভয় আমি আগে কখনও লিখিনি। প্রতিটি গল্পে, বড় গল্পে, প্রায় এক লক্ষ শব্দ জুড়ে আমার চেতন ও অবচেতন মন এঁকে গিয়েছে প্রাগৈতিহাসিক, পৌরাণিক ও অধুনা কদর্যতার ভীতিচিত্রলেখা। মানুষের জীবনের জটিলতার পরতে পরতে যে তমসানদীর রুধিরস্নান নিত্য সংঘটিত হয়ে চলেছে তারই প্রতিফলন এ চাঁড়ালের থান।
বিশু চাঁড়াল, সেই প্রত্যন্ত প্রদেশের বোধিবৃক্ষ, বোধিবৃক্ষের তলদেশে স্বয়ংরূপধারিণী কৃষ্ণকায় মেয়েটির সঙ্গে লেখকের জীবন এতটাই বিলীন হয়ে গিয়েছে যে তিনি নিজের কপালে এঁকে নিয়েছেন বিশু চাঁড়ালের ত্রিপুণ্ড্রক।
Reviews
There are no reviews yet.