Description
সূর্যের প্রথম কিরণের সঙ্গেই জতুগৃহের ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান হল তার কাছে। তবে জতুগৃহের দিকে এগোতেই বাধা পেল শকুনি। কে ওই দীর্ঘদেহী শ্যামবর্ণ পুরুষ? হরিদ্রাভ উত্তরীয় তাঁর সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে; এক হাতে তাঁর বাঁশী, মুকুটের শোভা ময়ূরপুচ্ছ। একটু এগিয়ে কাছাকাছি একটি লতাগুল্মের ঝোপে আশ্রয় নিল সে। সেই পুরুষটি যেন আপ্রাণ কিছু খুঁজে চলেছে। ঘনঘন নেতিবাচক মাথা নাড়ছে সে। ঊষার আলো-আঁধারিকে অবলম্বন করে শকুনি আরো একটু এগিয়ে আশ্রয় নিল জতুগৃহের এক প্রান্তে। পুরুষটি অনেকক্ষণ ধরে নানা পর্যবেক্ষণের পর যেন নিশ্চিন্ত হল। তাঁর উচ্চহাস্যের শব্দ মোহিত করল শকুনিকে।
“দ্বারকাধীশ।” এক ব্যাক্তি এসে দাঁড়াল সেই পুরুষের পিছনে। দ্বারকাধীশ! ইনিই তবে বলভদ্রের অনুজ, ইনিই তবে বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ, যাদবদের নায়ক! বিমোহিত হয়ে এক মনে সে তাকিয়ে রইল বাসুদেবের দিকে। অঙ্গদের মুখ থেকে শুনে শুনে একটা ধারণা হয়েছিল। আজ সেই পুরুষকে সচক্ষে দেখে শকুনি যেন হতবাক। তার আবেশ ভঙ্গ হল একটি কন্ঠে, “দ্বারকাধীশ, প্রত্যুষকাল উপস্থিত।”
“আমি নিশ্চিত তারা জীবিত। চল, দ্বারাবতীতে প্রস্থান করব,” বলে উঠলেন বাসুদেব। হাতের বাঁশিটি ধরলেন ঠোঁটের কাছে। তাতে বেজে উঠল একটা অদ্ভুত শিহরণকারী সুরের ব্যঞ্জনা। দ্বারকাধীশ রথে উঠে অদৃশ্য হলেন বারণাবতের পথে।
একাগ্র শকুনি মোহাবিষ্ট হয়ে শুনতে থাকল সেই বাঁশীর সুর।
ইনি কি যোদ্ধা? নাকি শিল্পী? কে ইনি? কী এঁর সত্য?
বারণাবতের জতুগৃহের কঙ্কালগুলি ভালোভাবে দেখেছে যে, বলা ভাল পর্যবেক্ষণ করেছে। নাহ্, ভীমের যা উচ্চতা, সেই উচ্চতার একটি দেহও নেই এখানে। তার মানে পাণ্ডবেরা জীবিত। শকুনি ক্রুদ্ধ হয়েছিল ওই গৃহের তার আরাধ্য দেবতার নামে রাখার জন্য। কিন্তু আজ মনে হল, তার আরাধ্য মহাদেবই যেন রক্ষা করেছেন পাণ্ডবদের, তার প্রতিশোধের প্রয়োজনীয় প্রহরণকে। তবে জীবিত হলেও আশা করা যায় পাণ্ডবেরা এখনই সশরীরে উপস্থিত হবে না। সেই অবসরে ধার্তরাষ্ট্রদের মন আরো বিষিয়ে তুলতে হবে, যাতে দুই যুযুধান পক্ষ একে অন্যকে দেখেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধে রত হয়। শকুনি নিশ্চিত এরা পাণ্ডব নয়, তবুও সেইসব দেহ এনে পঞ্চপাণ্ডব এবং কুন্তীর পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন হল। দুর্যোধন আর তার বাকি ভ্রাতারা কৃত্রিম শোক প্রকাশ করতে শুরু করলে তা শকুনির হাসির উদ্রেক ঘটাল। সে কোনমতে নিজেকে সংযত করে লক্ষ্য করল বিদুর যেন ততটাও শোকগ্রস্ত নয় যতটা পাণ্ডববিহনে তার হওয়া উচিত। এর অর্থ সুস্পষ্ট, বিদুরের কাছে পাণ্ডবদের সকুশলে বারণাবত ত্যাগের সংবাদ আছে। সে নিজেও বৃথা শোক প্রকাশে সময়ের অপচয় করেনি। আগামীকালের যুদ্ধের পথ সুগম করে রাখতে হবে। কুরুকুলের বিনাশ যজ্ঞের হোতা যে সে। সেই কাজ তাকে নিষ্ঠা সহকারে সম্পূর্ণ করে তুলতে হবে। পাণ্ডব, কৌরব কোনো পক্ষেরই চিহ্ন থাকবে না এই ধরাধামে। তবেই… তবেই তার প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে।
Reviews
There are no reviews yet.